অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বনাম মাল্টিলেভেল মার্কেটিং
বিষয়টি আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কিভাবে একটি অন্যটির চেয়ে ভিন্ন বা কিভাবে আমরা দুটো বিষয়কে পৃথক করবো।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কনসেপ্টটি মূলত চালু হয় ১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে, যখন ই-কমার্স প্রথা চালু হয়। উইলিয়াম জে টবিন নামে এক ভদ্রলোক যিনি পিসি ফ্লাওয়ার্ন এন্ড গিফট নামক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার প্রথমবারের মতো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কনসেপ্ট (Prodigy Network ) চালু করেন। প্রডিজি নেটওয়ার্ক ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৬ মিলিয়ন সেলস রেভিনিউ অতিরিক্ত লাভ করে। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট চালু হয় ১৯৯৬ সালে অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট নামে।
অন্যদিকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর সূচনা ১৯৪৫ সালে কার্ল রেইনবোর্গ নামে একজন রসায়নবিদ এর হাত ধরে। উনিই প্রথম মাল্টিভিটামিন আবিস্কার করেন। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি ১৯৭৯ সালে আমেরিকায় বৈধতা লাভ করে।
আপাতদৃষ্টিতে একরকম মনে হলেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্যনীয়। আমরা কিছু আলোচনা করবো এখানেঃ
১) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে কোন ধরনের পণ্য বা প্যাকেজ না কিনেই কাজ শুরু করা যায় অর্থাৎ একজন অ্যাফিলিয়েট রেজিষ্ট্রেশন করেই কাজ শুরু করতে পারেন তার জন্য পণ্য ক্রয় বাধ্যতামূলক নয় বা এমন কোন শর্ত থাকে না। অন্যদিকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে পণ্য বা সেবা ক্রয় অনেকটা বাধ্যতামূলক। এখানে কোম্পানী কর্তৃক উৎপাদিত বা বাজারজাতকৃত পণ্য পরিবেশকগন ক্রয়-বিক্রয় করেন।
২) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম স্বতন্ত্রভাবে করা হয় অর্থাৎ একজন অ্যাফিলিয়েট নিজে ওয়েবসাইট তৈরী করে অথবা সোশ্যাল শেয়ারিং এর মাধ্যমে অসংখ্য ক্রেতার নিকট অসংখ্য পণ্য ও সেবার বার্তা পৌঁছাতে পারেন। অন্যদিকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে একজন পরিবেশক নতুন নতুন ক্রেতা তৈরী করেন পরবর্তীতে ঐসব ক্রেতাও পরিবেশকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন। এখানে পরিবেশকগণ পণ্য সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান লাভ করেন প্রশিক্ষন গ্রহনের মাধ্যমে।
৩) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে অ্যাফিলিয়েট লিংক মুছে গেলে বা হ্যাকড হয়ে গেলে সেখান থেকে কমিশনের সুযোগ থাকে না যেখানে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে প্রত্যেকের টীম ছুটে যাওয়ার বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ থাকে না। পরিবেশকগন টীম মেম্বার ও তাদের বিক্রয়লব্ধ পরিমান জানার পেয়ে থাকেন।
৪) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে একই ব্যক্তি একাধিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারেন। অসংখ্য পণ্য শেয়ার করতে পারেন এবং ক্যাটাগরী পছন্দ করতে পারেন যেমন অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে অসংখ্য পণ্য থেকে নিশ অনুযায়ী অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগন পণ্য বাছাই করেন। অন্যদিকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে কোম্পানীর নির্দিষ্ট পণ্যই শুধুমাত্র মার্কেটিং করার সুযোগ পেয়ে থাকেন এবং তা সীমিত সংখ্যক হয়ে থাকে।
৫) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুধুমাত্র অনলাইন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সম্ভব অন্যদিকে এমএলএম পদ্ধতি অফলাইনেও করা সম্ভব সীমিত আকারে।
৬) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সিস্টেমে নতুন ক্রেতা অর্ন্তভূক্তির কোন শর্ত থাকে না যেখানে এমএলএম সিস্টেমে নতুন ক্রেতা অর্ন্তভূক্তি ব্যতীত ভালো আয় অনেকটাই অপ্রতুল।
৭) মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে রেফারকৃত বা স্পন্সরকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে কমিশন পাওয়া যায় এভাবে একাধিক স্তর থেকে আয়ের সুযোগ থাকে কোম্পানীর কম্পেন্সেশন পলিসি অনুযায়ী অন্যদিকে অ্যাফিলিয়েট সিস্টেমে স্পন্সরিং সিস্টেম পূর্বে ছিল না যদিও বর্তমানে এখানে রেফারেল আয়ের সুযোগ আছে যদিও এটি বহুস্তরীয় কমিশন সিস্টেম করার সুযোগ নেই। যদি এমন সুযোগ থাকে তাহলে তা এমএলএম বলেই গণ্য করা হয়।
৮) মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতিটি দেশেই পৃথক আইন বা নীতিমালা বিদ্যমান যেমন বাংলাদেশে “এমএলএম কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩”। রয়েছে প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রনে ডিরেক্ট সেলিং এসোসিয়েশন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রিত হয় ই-কমার্স নীতিমালার অধীনে।
প্রতিটি বিপণন পদ্ধতির মধ্যে কিছু মৌলিক বিষয় মিল হয়েছে যেমন পণ্য বিক্রয়, ক্রেতা-বিক্রেতা, বাজারজাতকরণ পলিসি। আবার কিছু বিষয় অমিল যেমন এর প্রয়োগক্ষেত্র, কমিশন বন্টন প্রনালী, প্লাটফর্ম ইত্যাদি। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সিস্টেম প্রকৃতপক্ষে দুটির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান যা আলোচনা কিছু ধারনা আমরা পেয়েছি। আরো বিস্তর পড়াশোনার মাধ্যমে আমরা আরও ব্যাপক ধারনা লাভ করতে পারি ইন্টারনেটের সহায়তায়।